এক যুগের অবসান 🌹🕊
১৬টি বসন্ত পেরিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল মধ্যপ্রদেশের বিখ্যাত কলারওয়ালি। পেঞ্চ ব্যাঘ্র প্রকল্পের জনপ্রিয় বাঘিনী শনিবার সন্ধেয় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। মুখ্য বনপাল অলোক কুমার জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরে অসুস্থ ছিল বাঘিনী। বার্ধক্যের ভারে নুইয়ে গিয়েছিল শরীর। তাঁর দাবি, “অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দিলে যেমন হয় মানুষের ক্ষেত্রে, এরও তাই হয়েছিল। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে ময়নাতদন্তের পর।”
পেঞ্চে দীর্ঘদিন ধরে বন্যপ্রাণীদের ছবি তুলে আসছেন ফটোগ্রাফার ওম বীর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, “কলারওয়ালি বাঘিনী টি-১৫ নামেও পরিচিত ছিল। শেষবার ১৪ জানুয়ারি তাকে দেখা যায় ব্যাঘ্র প্রকল্পের ভুরা দেব নালার কাছে। সেখানে জল খেতে এসেছিল সে। প্রস্রবণের কাছে জল খেতে এসে সে বসে পড়ে। হাঁতে পারছিল না সে। প্রায় ২ ঘণ্টা একভাবে শুয়ে ছিল কলারওয়ালি। সেইসময় পেঞ্চে ৪২টি গাড়ি ঘুরছিল, সবাই তাকে শুয়ে থাকতে দেখে।”
এরপর বন আধিকারিকরা সেখানে গিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেন। বাঘিনীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর শনিবার সন্ধে ৬.১৫ নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, টি-১৫ ২০০৫ সালে ২২ সেপ্টেম্বর জন্মায়। তাকে জন্ম দেয় পুরুষ বাঘ টি-১ বা চার্জার এবং বাঘিনী টি-৭ বা বড়ি মাদা। বড়ি মাদার চার শাবকের প্রথম ছিল কলারওয়ালি। জনপ্রিয় বাঘিনী বিবিসি-র তথ্যচিত্র ‘স্পাই ইন দ্য জঙ্গল’-এও প্রদর্শিত হয়েছিল।
মধ্যপ্রদেশ ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ডা. অনিরুদ্ধ মজুমদার দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, “কলারওয়ালি হল প্রথম শাবক যে বাবা টি-১ এর সঙ্গে থাকতে শুরু করে। বাকিদের থেকে সবার আগে আলাদা হয় সে। পেঞ্চের সবচেয়ে ক্ষিপ্র বাঘিনী ছিল সে। বাবার মতোই কলারওয়ালিও নিজের এলাকায় দাপট রাখত। শিকারের জন্য বিখ্যাত ছিল সে। ২০১০ সালের অক্টোবরে রেকর্ড পাঁচটি শাবকের জন্ম দেয় সে।
পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় ছিল কলারওয়ালি। সঞ্জয় তিওয়ারি নামে এক সমজাকর্মী জানিয়েছেন, পর্যটকদের পছন্দ করত কলারওয়ালি। জিপের আওয়াজ পেলেই সামনে বেরিয়ে এসে কাচা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেত সে। সে চাইত সবাই তাকে দেখুক। ডা. মজুমদার বলেছেন, “সাধারণত বাঘ ১২ বছরের বেশি বাঁচে না। কারণ নিজের এলাকা রক্ষা করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু কলারওয়ালি ছিল ব্যতিক্রম। শিকারের এলাকা যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রাখত সে। পেঞ্চের কোর এরিয়ায় নিজের শাবকদের নিয়ে রাজত্ব করত কলারওয়ালি। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে নিজের এলাকা ধরে রাখতে বহুবার আহত হয়েছে সে।”
২০০৮ সালে ১১ মার্চ টি-১৫ প্রথম বাঘিনী হিসাবে গলায় কলার পরে। ডা. মজুমদার তাকে এই কলার পরান। ওইসময় তিন শাবক ছিল তার। পরে একটাও বাঁচেনি। ওই বছরই অক্টোবরে আরও চারটি শাবকের জন্ম দেয় সে। তিনটি পুরুষ একটি মহিলা। তাদের বড় করে তোলে সে। এত বছর ধরে ২৯টি শাবকের জন্ম দেয় কলারওয়ালি। তার মধ্যে ২৫টি বেঁচে রয়েছে। ডা. মজুমদারের মতে, মধ্যপ্রদেশের গর্ব ছিল কলারওয়ালি। সেই জনপ্রিয়তা নিয়েই চলে গেল সে।